আন্তর্জাতিক তারিখরেখা (International Date Line)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী | | NCTB BOOK
7

দ্রাঘিমারেখার নিয়মানুসারে মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে অগ্রসর হলে প্রতি ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য ৪ মিনিট সময়ের ব্যবধান হয়। আমরা জানি ০° দ্রাঘিমার ঠিক উল্টো দিকে ১৮০° পূর্ব ও পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা । যেহেতু প্রতি ১°-এর জন্য ৪ মিনিট সেহেতু ১৮০°-এর জন্য ১৮০ X ৪ = ৭২০ মিনিট অর্থাৎ ১২ ঘণ্টার পার্থক্য হয়। এভাবে দুই দিকে, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ১২ ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধান হয়। পূর্ব দিকে গেলে ১২ ঘণ্টা বাড়ে আর পশ্চিম দিকে গেলে ১২ ঘণ্টা কমে অর্থাৎ একই দ্রাঘিমায় ১৮০° তে সময়ের ব্যবধান দেখা দেয় ২৪ ঘণ্টা।
এর জন্য তারিখ ও বারের যে সমস্যা হয় তার সমাধানকল্পে ১৮৮৪ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ‘দ্রাঘিমা ও সময়' সম্পর্কিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা হিসেবে স্থির করা হয় ।

আমরা চিত্রের মধ্যে দেখতে পাই, গ্রিনিচে ১৬ই ডিসেম্বর সকাল ৬টা হলে আমরা যদি পূর্ব দিকের সময় হিসাব করি তাহলে যখন ১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমায় আসব তখন সেখানে সময় হবে ১৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা। ঠিক উল্টো দিকে পশ্চিমে ১৮০° তে আসলে সেখানে ১৫ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা হবে। কারণ পূর্ব দিকে সময় বাড়ে আর পশ্চিম দিকে সময় কমে। আমরা জানি ১৮০° পূর্ব ও ১৮০° পশ্চিম একই স্থান। তবে এখানে সময়ের পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে ২৪ ঘণ্টা এবং তারিখও হয়ে যাচ্ছে দুই রকম। এই অসুবিধা দূর করার জন্য পৃথিবীর মানচিত্রে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে ১৮০° দ্রাঘিমা অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা প্রবর্তন করা হয়েছে ।

পশ্চিমগামী জাহাজ আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা অতিক্রমকালে ঘড়ির সময় একদিন বাড়িয়ে অর্থাৎ সেদিন সোমবার থাকলে তাকে মঙ্গলবার করা হয়। আর জাহাজ যদি পূর্ব দিকে যায় তাহলে একদিন বিয়োগ করতে হয়। সেদিন মঙ্গলবার হলে একদিন কমিয়ে সোমবার করা হয়। তাই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা অতিক্রম করার সূত্র হলো : 'পশ্চিমগামী যানের জন্য একদিন যোগ করতে হবে এবং পূর্বগামী যানের ক্ষেত্রে একদিন বিয়োগ করতে হবে।”

১৮০° দ্রাঘিমারেখা পৃথিবীর পশ্চিম বা পূর্ব গোলার্ধের তারিখ বিভাজিকার ( Date line divider) কাজ করে। এজন্যই ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলে (চিত্র ২.১২)।
আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাকে কোথাও কোথাও বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ এ রেখাকে ১৮০° দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে টানা হলেও সাইবেরিয়ায় উত্তর-পূর্বাংশ এবং অ্যালিউসিয়ান, ফিজি এবং চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জের স্থলভাগকে এড়িয়ে চলার জন্য এই রেখাটিকে অ্যালিউসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে এবং ফিজি ও চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জে ১১° পূর্ব দিয়ে বেঁকে এবং বেরিং প্রণালিতে ১২° পূর্বে বেঁকে শুধু পানির উপর দিয়ে টানা হয়েছে। তা না হলে স্থানীয় অধিবাসীদের বার নির্ণয় করতে অসুবিধা হতো। কারণ একই স্থানের মধ্যেই সময় এবং বার দুই রকম হতো।

প্রতিপাদ স্থান (The antipodes) : আমরা জানি পৃথিবী গোল তাই এর কোনো একটি স্থানের বিপরীত দিকে অন্য কোনো একটি স্থান রয়েছে। ভূপৃষ্ঠের কোনো বিন্দু থেকে পৃথিবীর কোনো কল্পিত ব্যাস ভূকেন্দ্র ভেদ করে অপরদিকে ভূপৃষ্ঠকে যে বিন্দুতে স্পর্শ করে সেই বিন্দুকে প্রথম বিন্দুটির প্রতিপাদ স্থান বলে। কোনো বিশেষ দ্রাঘিমায় অবস্থিত স্থান সেই স্থানের বিপরীত দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত হয়। অর্থাৎ দুই দ্রাঘিমার যোগফল হবে ১৮০°। যেহেতু দুই দ্রাঘিমার দূরত্ব হবে ১৮০° সেহেতু দুটির মধ্যে সময়ের পার্থক্য হবে (১৮০ X ৪ মিনিট = ৭২০ মিনিট বা ১২ ঘণ্টা) = ১২ ঘণ্টা। চিত্রে চ বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান ছ বিন্দু।

Content updated By
Promotion